২৯শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সোমবার , সকাল ৭:১৭

হাদীসে নববী – পর্ব- ১

হাদীসে নববী – পর্ব- ১

কুরআন অনুধাবনে সুন্নাহর প্রয়োজনীয়তা

কুরআন ও সুন্নাহ, একটি অপরটির পরিপূরক। উভয়টিই আল্লাহ তাআলার ওহী এবং উভয়টিই শরীয়তের উৎস। এতে কোনো সন্দেহ নেই। স্বয়ং কুরআন কারীমে আল্লাহ তাআলা রাসূলের বাণীকে ওহী সাব্যস্ত করে ইরশাদ করেছেন

﴿وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى. إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى﴾

তিনি আপন খেয়াল-খুশি মত কিছু বলেন না। এ তো কেবল ওহী, যা তাঁর নিকট প্রত্যাদেশ করা হয়।-সূরা নাজম (৫৩) : ৩-৪

সুতরাং ওহী হওয়ার দিক থেকে কুরআন ও সুন্নাহর মাঝে কোনো পার্থক্য নেই।

কুরআন ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব রাসূলের:

কুরআন নাযিল করেছেন আল্লাহ তাআলা। এর হেফাযতের দায়িত্বও আল্লাহ তাআলা নিজ যিম্মায় তুলে নিয়েছেন। কিন্তু কুরআনকে বর্ণনা করা এবং এর ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অর্পণ করেছেন। পবিত্র কুরআন কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,

﴿وَأَنزَلنَاۤ إِلَيْكَ ٱلذِّكرَ لِتُبَينَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيهِم وَلَعَلَّهُم يتَفَكَّرُونَ﴾

আমি আপনার প্রতি এই কিতাব নাযিল করেছি, যেন আপনি সেসব বিষয় ব্যাখ্যা করে দেন, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে। যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। -সূরা নাহল (১৬) : ৪৪

এই দৃষ্টিকোণ থেকে কুরআন ও সুন্নাহ একই পর্যায়ভুক্ত। অর্থাৎ, যেমনিভাবে কুরআন ও সুন্নাহ উভয়টি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত ওহী, ঠিক তেমনিভাবে উভয়টি বর্ণনা করা এবং ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব একমাত্র রাসূলের। কিংবা আমরা যদি অন্যভাবে বলি তাহলে বলতে হবে, সুন্নাহ হচ্ছে কুরআনেরই ব্যাখ্যা ও বিস্তারিত বিবরণ। তাই রাসূল ছাড়া যেমনিভাবে হাদীস বোঝার এবং সে অনুযায়ী আমল করার কোনো পথ নেই, ঠিক তেমনিভাবে রাসূলের সুন্নাহকে বাদ দিয়ে কুরআন বোঝার এবং সে অনুযায়ী আমল করার কোনো বিকল্প রাস্তা নেই।

সাহাবীগণ আমলের ক্ষেত্রে কুরআন সুন্নাহর মাঝে কোনো পার্থক্য করতেন

এ কারণেই সাহাবায়ে কেরাম রা. কুরআন ও সুন্নাহর মাঝে কোনো পার্থক্য করতেন না। আমলের ক্ষেত্রে এবং বিধান মানার ক্ষেত্রে সাহাবীদের নিকট কুরআন ও সুন্নাহর মাঝে কোনো তারতম্য ছিল না। কারণ, তারা জানতেন, কুরআন ও সুন্নাহ ওহীর এই উভয় উৎসের বর্ণনা করার দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা রাসূলকে দিয়েছেন। তাই তারা দেখতেন, রাসূল কিভাবে আমল করছেন। রাসূল বিষয়টির কী ব্যাখ্যা করছেন। সেটা কুরআনে আছে নাকি হাদীসে, এটা তাদের নিকট ধর্তব্য কোনো বিষয় ছিল না। বিষয়টি ভালোভাবে বোঝার জন্য আমরা এখানে মাত্র দুইজন সাহাবীর বক্তব্য তুলে ধরছি।

এক. বিশিষ্ট সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে একজন জিজ্ঞেস করল, আবাসে থাকাকালীন নামায এবং শত্রু ভীতিকালীন নামাযের বিবরণ তো আমরা কুরআনে পাই। তবে সফরকালীন নামাযের বিবরণ তো কুরআনে পাই না? তখন আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বললেন-

إِنَّ اللهَ بَعَثَ إِلَيْنَا مُحَمَّدًا صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ وَلاَ نَعْلَمُ شَيْئًا،فَإِنَّمَا نَفْعَلُ كَمَا رَأَيْنَا مُحَمَّدًا صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ يَفْعَلُ.

আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন এ অবস্থায় যে, আমরা কিছুই জানতাম না। তাই আমরা তেমনই করি, যেমন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে করতে দেখেছি।-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১০৬৬; সুনানে নাসায়ী ৩/১১৭; মুসতাদরাকে হাকেম ১/২৫৮ হাদীসটির সনদ হাসান।

দুই. আরেক সাহাবী জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. রাসূলের সাথে হজের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন

وَرَسُولُ اللهِ ﷺ بَيْنَ أَظْهُرِنَا، وَعَلَيْهِ يَنْزِلُ الْقُرْآنُ، وَهُوَ يَعْرِفُ تَأْوِيلَهُ، وَمَا عَمِلَ بِهِ مِنْ شَيْءٍ عَمِلْنَا بِهِ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আমাদের মাঝে ছিলেন। তাঁর উপর কুরআন নাযিল হচ্ছিল। তিনি তার ব্যাখ্যা জানতেন। তাই তিনি যেভাবে আমল করছিলেন আমরাও সেভাবে আমল করছিলাম। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১২১৮/১৪৭

কুরআন বোঝার জন্য সুন্নাহর প্রয়োজনীয়তা

এটি একটি স্বতঃসিদ্ধ ও স্বীকৃত বিষয় যে, কুরআনকে বোঝার এবং উপলব্ধি করার জন্য সুন্নাহর কোনো বিকল্প নেই। সুন্নাহ ছাড়া কুরআন বোঝার কল্পনাই করা যায় না। রাসূলকে বাদ দিয়ে আল্লাহ তাআলা তাঁর পবিত্র কালাম বোঝার আলাদা কোনো পথ রাখেননি। বরং আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূলকে এজন্যই পাঠিয়েছিলেন, যেন তিনি উম্মাহর কাছে কুরআনকে যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেন। এর জন্য রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনভর কত ধরনের পন্থা অবলম্বন করেছিলেন, তা একটি বিস্তারিত গবেষণার বিষয়। সংক্ষেপে আমরা এভাবে বলতে পারি, রাসূলের যিন্দেগীর পুরোটাই ছিল কুরআনের চর্চা ও তার বাস্তব অনুশীলন। কুরআনি যিন্দেগীর বাস্তব নমুনা ছিলেন আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সম্ভবত এই কারণেই রাসূলের সবচেয়ে প্রিয় জীবনসঙ্গিনী আয়েশা রা. রাসূলের স্বভাব চরিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন

إِنَّ خُلُقَ نَبِيِّ اللهِ ﷺ كَانَ الْقُرْآنَ.

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বভাব চরিত্র ছিল কুরআন। —সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৪৬

সুতরাং সুন্নাহকে বাদ দিয়ে কুরআন বোঝার চেষ্টা করা নিতান্ত বোকামি বৈ কিছু নয়।

নববী যামানায় কুরআন বোঝা:

যদি সুন্নাহকে বাদ দিয়ে, রাসূলের শরণাপন্ন না হয়ে কুরআন বোঝা সম্ভব হত, তবে সেটা সবচেয়ে বেশি পারতেন কুরআন নাযিলের যামানার লোকেরা। তথা সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম। কারণ, তারা কুরআন নাযিলের প্রেক্ষাপট দেখেছেন। সরাসরি রাসূলের উপর ওহী নাযিল হতে দেখেছেন। তারা ছিলেন সবচেয়ে বিশুদ্ধভাষী আরব। কুরআনের প্রথম এবং সরাসরি সম্বোধিত ব্যক্তিও ছিলেন তারা। কিন্তু তা সত্ত্বেও সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম অনেক স্থানেই সরাসরি কুরআনের মর্মার্থ বুঝতে সক্ষম হননি। বরং তাদেরকে রাসূলের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। এটা তো  কেবল কুরআনের আয়াতের অর্থ বোঝার ক্ষেত্রে। আর কুরআনের যেসব বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ হাদীসে এসেছে, সেগুলোর জন্য যে রাসূলের দ্বারস্থ হতে হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখানে আমরা উদাহরণস্বরূপ নববী যামানার দুইটি ঘটনা তুলে ধরছি, যে দুটি ঘটনা থেকে এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, রাসূলের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া সাহাবীগণ কুরআনের আয়াতের অর্থ বুঝতেও সক্ষম ছিলেন না।

এক. বিখ্যাত সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এই আয়াত নাযিল হল

﴿الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ﴾

যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে জুলুমের সাথে মিশ্রিত করেনি। —সূরা আন’আম (৬) : ৮২

তখন সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর নিকট বিষয়টা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াল। তারা বললেন, আমাদের কে আছে যে নিজের প্রতি জুলুম করে না? তখন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যেমনটা মনে করছ ব্যাপারটা সেরকম নয়।

বরং এটা তো সেই জুলুম যার কথা লুকমান রাহ. তার ছেলেকে বলেছিলেন

﴿يا بني لَا تُشرِك بِٱللَّهِ إِنَّ ٱلشِّركَ لَظُلمٌ عَظِيم﴾

হে বৎস, আল্লাহর সাথে শিরক করো না। নিশ্চয়ই শিরক ভয়াবহ জুলুম।-সূরা লুকমান (৩১) : ১৩

– সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৯৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১২৪

দুই. বিশিষ্ট সাহাবী আদী ইবনে হাতেম রা. বলেন, যখন এই আয়াত নাযিল হল,

﴿حَتّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلْخَيْطُ ٱلأَبْيَضُ مِنَ ٱلْخَيْطِ ٱلأَسْوَدِ﴾

ভোরের সাদা রেখা কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত তোমরা পানাহার করো। সূরা বাকারা (২) : ১৮৭

তখন আমি একটি কালো সুতা এবং একটি সাদা সুতা নিয়ে আমার বালিশের নিচে রেখে দিলাম। রাতের বেলা আমি দেখতে লাগলাম। কিন্তু এক সুতা আরেক সুতা থেকে আমার নিকট স্পষ্ট হল না। ফলে সকালবেলা আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে পুরো ঘটনা খুলে বললাম। রাসূল বললেন, আরে এটা তো রাতের কালিমা ও সকালের শুভ্রতা। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯১৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৯০

অর্থাৎ, কুরআনে ‘খায়ত্ব’ শব্দ দ্বারা সুতা উদ্দেশ্য নয়। বরং আকাশের কালিমা ও শুভ্রতা উদ্দেশ্য।

উপরক্ত দুইটি ঘটনাতেই আমরা দেখছি, সাহাবায়ে কেরাম রা. যেই অর্থ বুঝেছিলেন তাতে আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো ভুল ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটাকে কুরআনের সঠিক তাফসির সাব্যস্ত করেননি। এখান থেকে এ কথা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, কুরআনের তাফসির সহীহ হওয়ার জন্য কেবল আভিধানিক দিক থেকে শুদ্ধ হওয়া যথেষ্ট নয়। বরং সেটা তাফসিরের স্বতঃসিদ্ধ মূলনীতির আলোকেও সঠিক হতে হবে। পাশাপাশি সেটা হাদীস, সুন্নাহ ও শরীয়তের অন্যান্য মৌলিক নীতিমালার আলোকেও বিশুদ্ধ হতে হবে।

নবীজীর ওফাতের পর কুরআন বোঝা:

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর সাহাবায়ে কেরাম রা. নবীজীর সুন্নাহকে নবীজীর স্থলাভিষিক্ত বানিয়ে নেন। নবীজীর জীবদ্দশায় তারা যত ক্ষেত্রে নবীজীর শরণাপন্ন হতেন, এই সকল ক্ষেত্রে এখন সাহাবীগণ হাদীসকে নিজেদের জন্য অনুসরণীয় এবং অনুকরণীয় সাব্যস্ত করেন। কুরআন কারীমের তাফসির করা এবং কুরআন বোঝার ক্ষেত্রেও এর ভিন্ন হয়নি। সাহাবায়ে কেরাম রা. হাদীসকে কুরআন অনুধাবনের জন্য অন্যতম মাধ্যম পরিগণিত করেন। এখানে আমরা সর্বপ্রথম খলীফা আবু বকর সিদ্দিক রা.-এর একটি বক্তব্য তুলে ধরছি। যেখান থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, কুরআন কারীমের যথাযথ তাফসির ও ব্যাখ্যা করার জন্য সুন্নাহর কোনো বিকল্প নেই।

কায়স ইবনে আবি হাযেম রাহ. বর্ণনা করেন, আবু বকর রা. একবার খুতবা দিতে দাঁড়ালেন। আল্লাহর হামদ্ ও সানা পাঠ করার পর বললেন

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّكُمْ تَقْرَءُونَ هَذِهِ الْآيَةَ: ﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لَا يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ﴾ إِلَى آخِرِ الْآيَةِ، وَإِنَّكُمْ تَضَعُونَهَا عَلَى غَيْرِ مَوْضِعِهَا، وَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: >إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوْا الْمُنْكَرَ، لا يُغَيِّرُوهُ، أَوْشَكَ اللهُ أَنْ يَعُمَّهُمْ بِعِقَابِهِ<.

হে লোক সকল, তোমরা তো এই আয়াত তেলাওয়াত করো

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لَا يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ﴾

হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের চিন্তা করো। তোমরা সঠিক পথে থাকলে যারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে তারা তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। সূরা মায়েদা (৫) : ১০৫

তোমরা এই আয়াতকে অপাত্রে ব্যবহার করো। অথচ আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, মানুষ যখন অশ্লীল কর্ম হতে দেখেও তাকে পরিবর্তন করে না, তখন আশংকা আছে যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর শাস্তিকে সবার উপর ব্যাপক করে দিবেন। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৩৩৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৪০০৫। এর সনদ সহীহ।

এখানে আবু বকর রা. এটা বোঝাতে চেয়েছেন যে, উপরিউক্ত আয়াতটিকে যদি হাদীসের সাথে মিলিয়ে না বুঝতে চেষ্টা করা হয়, তবে সেটার সঠিক মর্মার্থ কখনোই উপলব্ধি করা যাবে না।

এভাবে তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, আয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন সহ পরবর্তী প্রত্যেক যামানা থেকেই এরকম ভুরি ভুরি উদাহরণ পেশ করা যাবে যে, মুফাসসিরগণ কুরআন বোঝার জন্য সুন্নাহর দ্বারস্থ হয়েছেন। সুন্নাহকে সামনে রেখে তারা কুরআনের অর্থ, মর্ম ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বের করতে চেষ্টা করেছেন। আর যেসব বিষয় কুরআনে সংক্ষিপ্তাকারে এসেছে, সেগুলো বিস্তারিত বিবরণ যে সমগ্র উম্মতে মুহাম্মাদী সুন্নাহ থেকেই গ্রহণ করেছেন, তা তো আর আলাদা করে বলার অপেক্ষাই রাখে না।

উপসংহার:

কুরআনের সঠিক তাফসির অনুধাবনের ক্ষেত্রে সুন্নাহর কোনো বিকল্প নেই। সুন্নাহকে বাদ দিয়ে কুরআনের বাস্তব অনুশীলনের কোনো পথ আল্লাহ তাআলা রাখেননি। তাই কুরআন কারীমকে যদি সঠিক ও যথাযথভাবে বুঝতে হয়, তবে আমাদেরকে সাহাবীদের রেখে যাওয়া সেই পথেরই অনুসরণ করতে হবে এবং কুরআন ও সুন্নাহ উভয়টির একটিকে অপরটির পরিপূরক ধরে আমাদের দ্বীনি যিন্দেগীতে তার যথার্থ প্রতিফলন ঘটাতে হবে। তবেই আশা করা যায় যে, কুরআনি যিন্দেগীর সেই কাঙ্ক্ষিত নূরানী পথে আমরা কিছুটা হলেও অগ্রসর হতে পারব ইনশাআল্লাহ।

 

লেখক, মাওলানা ফযযুল্লাহ মুনির

লেখক, গবেষক

শিক্ষার্থী, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা, বাংলাদেশ।

#Leave A Comment

#Leave A Comment