২৯শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সোমবার , দুপুর ২:৪২

মুয়ামালাত – পর্ব- ২

মুয়ামালাত – পর্ব- ২

যাকাতের গুরুত্ব তাৎপর্য

যাকাত পরিচিতি

  • যাকাতের শাব্দিক ও পারিভাষিক বিশ্লেষণ:

যাকাত শব্দটি আরবি الزكاة শব্দের বাংলা রূপ। আভিধানিক অর্থে যাকাত শব্দটি الطهارة পবিত্রতা, النماء  বৃদ্ধি,البركة  বরকত, المدح প্রশংসা অর্থে ব্যবহৃত হয়। আল্লামা ইবনে মানজুর রহ. (মৃ. ৭১১ হি.) বলেন, যাকাত শব্দটি উল্লিখিত প্রত্যেকটি অর্থে কুরআন ও হাদীসে ব্যবহৃত হয়েছে। -লিসানুল আরব ৪/৩৮৭, দারুল হাদীস, কায়রো।

আল্লামা ইবনু ফারেস রহ. (মৃ. ৩৯৫ হি.) বলেন- الأصل في ذلك كله راجع إلى هذين المعنيين وهما النماء والطهارة উল্লিখিত সবগুলো অর্থের মধ্যে মূল অর্থটি হলো  النماء ,الطهارةতথা পবিত্রতা বৃদ্ধি। এ দুটি অর্থ থেকেই বাকি অর্থগুলোর সৃষ্টি। -মাকাইসুল লুগাহ ৩৮৬, দারুল হাদীস, কায়রো।

অর্থাৎ যাকাত আদায়ের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি ও পবিত্রতা লাভ করে।

কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা যাকাতের মর্মার্থ বুঝাতে যাকাত শব্দ ছাড়াও আরো কিছু শব্দ ব্যবহার করেছেন। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহ. (মৃ. ৮৫২ হি.) বলেন, ‘ইমাম ইবনুল আরাবী রহ. (মৃ. ৫৪৩ হি.) বলেছেন , যাকাত শব্দটি الصدقة الواجبة والمندوبة ওয়াজিব ও নফল সাদাকা, الحق অধিকার, النفقة খরচ, العفو ক্ষমা অর্থে ব্যবহৃত হয়’। -ফাতহুল বারী ৩/৩২১, মাকতাবাতুস সাফা, কায়রো।

পারিভাষিক অর্থ: কুয়েতের ওয়াকফ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত আল-মাওসূয়াতুল ফিকহিয়্যা আল-কুয়েতিয়ায় (২৩/২২৬) যাকাতের পরিচয় দেয়া হয়েছ  يطلق على أداء حق يجب في أموال مخصوصة، على وجه مخصوص، ويعتبر في وجوبه الحول والنصاب

যাকাত বলা হয় এমন আর্থিক হক্ব আদায়কে, যা নির্দিষ্ট কিছু সম্পদে, নির্দিষ্ট পন্থায় আদায় করা ওয়াজিব হয় এবং তাতে হাওল (বছর) ও নেসাব (নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ) ধর্তব্য হয়।

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, ‘ইমাম ইবনুল আরাবী রহ. যাকাতের পারিভাষিক সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন- إعطاء جزء من النصاب الحولي إلى فقير ونحوه যে নেসাবের উপর বছর অতিক্রান্ত হয়েছে তার কিয়দাংশ ফকির মিসকিনদের দান করা’। -ফাতহুল বারী ৩/৩২১, মাকতাবাতুস সাফা, কায়রো।

অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন কোন মুসলমান আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত (নেসাব) পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে এবং তা এক বছর পর্যন্ত তার কাছে বিদ্যমান থাকলে এর নির্ধারিত পরিমাণ অংশ হক্বদারের কাছে পৌঁছে দেয়াকে যাকাত বলা হয়।

  • যাকাতের বিধান কখন অবতীর্ণ হয়?

যাকাতের বিধান কখন অবতীর্ণ হয় তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন-

اختلف في أول وقت فرض الزكاة فذهب الأكثر إلى أنه وقع بعد الهجرة

যাকাত প্রথম কখন ফরয হয় তা নিয়ে মতানৈক্য আছে, অধিকাংশের মত হল, হিজরতের পর যাকাতের বিধান অবতীর্ণ হয়। -ফাতহুল বারী ৩/3২৫, মাকতাবাতুস সাফা, কায়রো।

হিজরতের পর কত হিজরিতে ফরয হয় এ-ব্যাপারে হাফেজ ইবনে কাসীর রহ. (মৃ. ৭৭৪ হি.) বলেন- إنما فرضت الزكاة بالمدينة في سنه اثنتين من الهجرة ‘হিজরতের পর দ্বিতীয় হিজরিতে মদিনায় যাকাত ফরজ হয়।’ -তাফসীরে ইবনে কাসীর 5/475, দারুল হাদীস, কায়রো।

আল্লামা আলাউদ্দিন হাসকাফি রহ. (মৃ. ১০৮৮ হি.) এ মতটিকে সমর্থন করেছেন। – আদ্দুররুল মুখতার মাআ রদ্দিল মুহতার ৩/১৭০, মাকতাবা যাকারিয়া, দেওবন্দ।

দ্বিতীয় হিজরির কোন মাসে অবতীর্ণ হয় তা নিশ্চিতভাবে বলা না গেলেও, এতটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায়, যাকাতের বিধান সাদাকাতুল ফিতরের পর অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত কায়েস ইবনে সাদ রা. বলেন-

 >أَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ بِصَدَقَةِ الْفِطْرِ قَبْلَ أَنْ تَنْزِلَ الزَّكَاةُ ، فَلَمَّا نَزَلَتِ الزَّكَاةُ ، لَمْ يَأْمُرْنَا ، وَلَمْ يَنْهَنَا ، وَنَحْنُ نَفْعَلُهُ<.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যাকাতের বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে সাদাকাতুল ফিতরের আদেশ করেন। অতঃপর যাকাতের বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর সাদাকাতুল ফিতরের ব্যাপারে কোন আদেশ নিষেধ করেননি। তবে আমরা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতাম। -সুনানে নাসাঈ, ২৫০৬; সুনানে ইবনে মাজাহ, ১৮২৮; হাদীসটির সনদ সহীহ।

উক্ত হাদীস উল্লেখ করার পর ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন- وهو دال على أن فرض صدقة الفطر كان قبل فرض الزكاة فيقتضي وقوعها بعد فرض رمضان وذلك بعد الهجرة وهو المطلوب  উক্ত হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয়, সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার পর যাকাত ফরজ হয়। এবং তা হিজরত পরবর্তী রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর অবতীর্ণ হয়।-ফাতহুল বারী, ৩/3২৫, মাকতাবাতুস সাফা, কায়রো।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয় যে, যাকাত ফরয হয় দ্বিতীয় হিজরিতে সিয়াম ও সাদাকাতুল ফিতরের বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর।

কুরআনে কারীমে যাকাতের গুরুত্ব                                     

ইসলামের মৌলিক বিধানসমূহের মধ্যে যাকাত অন্যতম। এর গুরুত্ব অপরিসীম। যাকাতের গুরুত্ব বুঝাতে কুরআনে কারীমের একটি নির্দেশই যথেষ্ট ছিল। তদুপরি আল্লাহ তাআলা এর গুরুত্ব বুঝাতে বহুবার যাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন। যাকাত শব্দটি কুরআনে কারীমে আলিফ-লামসহ ত্রিশটি স্থানে ও আলিফ-লাম ছাড়া তিনটি স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে। তন্মধ্যে আটটি স্থান মক্কী সূরায় আর বাকিগুলো মাদানী সূরায়।

বহু জায়গায় একই আয়াতে সালাতের পর যাকাত আদায়ের আদেশ করা হয়েছে। আল্লামা ইউসুফ কারজাভী রহ. (মৃ. ২০২২ খ্রি.) ফিকহুয্ যাকাতে (পৃ. 42, মুআসসাসাতুর রিসালাহ, বৈরুত) বলেছেন, এমন আয়াতের সংখ্যা সাতাশটি। আর আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহ. ( মৃ. ১২৫২ হি.) ফাতাওয়া শামীতে (৩/১৭০, মাকতাবা যাকারিয়া, দেওবন্দ) বত্রিশটির কথা উল্লেখ করেছেন।

উপরোক্ত পরিসংখ্যান থেকে আল কুরআনে যাকাতের কী পরিমাণ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। নিম্নে কিছু আয়াত উদ্ধৃত করা হলো-

  • আল্লাহ তাআলা নামাজের পাশাপাশি যাকাত আদায়েরও স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন: আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

{وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَآتُواْ الزَّكَاةَ وَارْكَعُواْ مَعَ الرَّاكِعِينَ}

তোমরা সালাত কায়েম করো ও যাকাত প্রদান করো এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু করো। -সূরা বাকারা (২): ৪৩।

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত মুবারক ইবনে ফাজালা রহ. (মৃ. ১৬৪ হি.) হযরত হাসান বসরী রহ. (মৃ. ১১০ হি.) থেকে বর্ণনা করেন-

عن الحسن في قوله تعالى: وآتوا الزكاة قال: فريضة واجبة، لا تنفع الأعمال إلا بها وبالصلاة

হযরত হাসান বসরী রহ. বলেন, যাকাত ফরজ। এবং যাকাত ও সালাত ছাড়া কোন আমলই উপকারে আসবে না।-তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/২০২, দারুল হাদীস, কায়রো।

অর্থাৎ সালাত ও যাকাত উভয়টি যথাযথভাবে আদায় করলে অন্যান্য আমল উপকারী হবে, অন্যথায় নয়।

  • যাকাত আদায়কারীগণ মুমিনদের দ্বীনি ভাই: আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

{فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ}

তারা যদি তওবা করে ও সালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই।-সূরা তাওবা (৯): ১১।

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম তাবারী রহ. (মৃ. ৩১০ হি.) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বক্তব্য পেশ করেছেন-  أمرتم بإقام الصلاة، وإيتاء الزكاة، ومن لم يزك فلا صلاة له  হযরত  আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, তোমাদেরকে একই সঙ্গে সালাত কায়েম ও যাকাত আদায় করতে আদেশ করা হয়েছে, যে যাকাত আদায় করেনা তার নামাজ হয় না। -তাফসীরে তাবারী ১১/৩৬২; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/১২০, দারুল হাদীস, কায়রো।

হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আসলাম রহ. (মৃ. ১৮২ হি.) বলেন-

افترضت الصلاة والزكاة جميعا لم يفرق بينهما وقرأ فإن تابوا أقاموا الصلاة.. وأبى أن يقبل الصلاة إلا بالزكاة، وقال: رحم الله أبا بكر ما كان أفقهه

সালাত ও যাকাত একসাথে ফরজ করা হয়েছে, দুটির মাঝে কোন পার্থক্য করা হয়নি। অতঃপর তিনি উক্ত আয়াতটি পাঠ করে বলেন, আল্লাহ তাআলা যাকাত ব্যতীত সালাত কবুল করতে অস্বীকার করেছেন। তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তাআলা হযরত আবু বকরের (রা.) উপর রহম করুন। তিনি অনেক বড় ফিকাহবিদ। -তাফসীরে তাবারী ১১/৩৬২।

তিনিই প্রথম বলেছিলেন- واللَّهِ لأُقَاتِلَنَّ مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ الصَّلاَةِ وَالزَّكَاةِ  যারা সালাত ও যাকাতকে বিচ্ছিন্ন করবে আমি তাদের সাথে যুদ্ধ করব। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪০০।

  • সালাত আদায় না করা যেমন কাফের ও মুশরিকের কাজ, তেমনি যাকাত আদায় না করাও কাফের ও মুশরিকের কাজ: আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

{وَوَيْلٌ لِلْمُشْرِكِينَ الَّذِينَ لَا يُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ}

মুশরিকদের জন্য দুর্ভোগ! যারা যাকাত আদায় করেনা, তারা আখেরাতকে অস্বীকার করে। -সূরা ফুসসিলাত (৪১): ৭।

  • যাকাত আদায়কারীদের ভয় ও দুশ্চিন্তা নেই: আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

{وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ}

যারা সালাত কায়েম করেছে ও যাকাত আদায় করেছে, তাদের প্রভুর নিকট তাদের বিনিময় রয়েছে। তাদের কোন ভয় নেই, দুশ্চিন্তাও নেই। -সূরা বাকারা (২): ২৭৭।

যাকাতের গুরুত্ব বুঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, আল্লাহ তাআলা মুমিনদের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করতে যেয়ে যেখানেই أقيموا الصلاة (নামাজ কায়েম করো) বলেছেন সেখানে সঙ্গে সঙ্গে বলেছেন آتوا الزكاة (তোমরা যাকাত আদায় করো)।

সহীহ হাদীসের আলোকে যাকাত

অসংখ্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. যাকাত আদায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। নিম্নে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলো।

  • যাকাত ইসলামের তৃতীয় রুকন বা স্তম্ভ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

>بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ<.

 ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি স্তম্ভের উপর। ১. আল্লাহ তাআলা ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই এবং হযরত মুহাম্মদ সা. আল্লাহর রাসূল একথার সাক্ষ্য দেয়া ২. সালাত কায়েম করা ৩. যাকাত আদায় করা ৪. রোজা রাখা ৫. সামর্থ্যবানের জন্য হজ করা। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৮।

  • যাকাত আদায় করলে জান্নাত লাভ করা যায়: হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

عَنْ أَبِي أَيُّوبَ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، أَنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِي الْجَنَّةَ قَالَ مَا لَهُ مَا لَهُ وَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَرَبٌ مَالَهُ تَعْبُدُ اللَّهَ ، وَلاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ وَتَصِلُ الرَّحِمَ.

হযরত আবু আইয়ুব রা. থেকে বর্ণিত, এক লোক নবীজিকে (সা.) বললেন, আমাকে এমন আমল বলে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বললেন, কি হয়েছে তার? কি হয়েছে তার? তার তো প্রয়োজন রয়েছে। তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করবে না, সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৯৬।

  • যাকাত আদায় করতে অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে হযরত আবু বকরের (রা.) যুদ্ধ ঘোষণা-

فَقَالَ وَاللَّهِ لأُقَاتِلَنَّ مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ الصَّلاَةِ وَالزَّكَاةِ فَإِنَّ الزَّكَاةَ حَقُّ الْمَالِ وَاللَّهِ لَوْ مَنَعُونِي عَنَاقًا كَانُوا يُؤَدُّونَهَا إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَقَاتَلْتُهُمْ عَلَى مَنْعِهَا

হযরত আবু বকর রা. বললেন, আল্লাহর কসম, যারা সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে তাদের বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ করবো; কেননা যাকাত হল সম্পদের হক্ব।  আল্লাহর কসম, তারা যদি একটি ছাগলছানা যাকাত দিতেও অস্বীকার করে যা নবীজির কাছে তারা দিত, তাহলে তা না দেয়ার কারণে আমি তাদের সাথে যুদ্ধ করব। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪০০।

  • যাকাত আদায়ের দ্বারা সম্পদের কর্তব্য আদায় হয়: ইরশাদ হয়েছে-

صلى الله عليه وسلم قال: >إِنْ أَدَّيْتَ زَكَاةَ مَالِكَ فَقَدْ قَضَيْتَ مَا عَلَيْكَ<. عن أبي هريرة أن النبي

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সা. বলেন, তুমি যখন তোমার মালের যাকাত আদায় করে দিলে, তখন তুমি তোমার কর্তব্য আদায় করে দিলে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৬১৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৩২১৬; হাদীসটির সনদ হাসান।

 

যাকাত আদায়ের উপকারিতা

যাকাত আদায়ের দ্বারা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি, নৈকট্য লাভ ও হেদায়েত প্রাপ্তিসহ পার্থিব জগতের বহু উপকারও সাধিত হয়। যাকাতের বহুবিধ উপকার সংক্রান্ত কুরআন ও হাদীসের কিছু বক্তব্য নিম্নে তুলে ধরা হলো-

  • যাকাত আদায়ের সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়: আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

{وَمَا آتَيْتُمْ مِنْ زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ}

আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির আশায় তোমরা যে যাকাত দিয়ে থাকো, তাই বৃদ্ধি পায়, আর তারাই সমৃদ্ধশালী। -সূরা রুম (৩৯): ৩৯।

  • আল্লাহ তাআলা সাদাকা-যাকাতকে বৃদ্ধি করেন-

{يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ}

আল্লাহ তাআলা সুদকে মিটিয়ে দেন আর সাদাকা-যাকাতকে বৃদ্ধি করেন। -সূরা বাকারা(২): ২৭৬।

উক্ত আয়াতের ব্যাখায় ইবনে কাসীর রহ. সহীহ বুখারীর (হাদীস নং ১৪১০) একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : >مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ ، وَلاَ يَقْبَلُ اللَّهُ إِلاَّ الطَّيِّبَ – وَإِنَّ اللَّهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلْوَهُ حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الْجَبَلِ<.

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি সা. বলেন, যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ কোন কিছু সাদাকা করবে, আল্লাহ তাআলা তা কবুল করেন, আর আল্লাহ তাআলা কেবল পবিত্র মাল কবুল করেন এবং আল্লাহ তাআলা তা ডান হাত দ্বারা গ্রহণ করে দাতার কল্যাণের জন্য প্রতিপালন করেন, যেমন তোমাদের কেউ অশ্বশাবক প্রতিপালন করে। অবশেষে সেই সাদাকা পাহাড় পরিমাণ হয়ে যায়। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৭১৭, দারুল হাদীস, কায়রো।

  • যাকাত আল্লাহ তাআলার ক্রোধকে প্রশমিত করে: হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

عن أنس ابن مالك قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: >إِنَّ الصَّدَقَةَ لَتُطْفِئُ غَضَبَ الرَّبِّ وَتَدْفَعُ مِيْتَةَ السُّوْءِ<.

হযরত আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি সা .বলেন, সাদাকা (যাকাত) রবের ক্রোধ প্রশমিত করে এবং অপমৃত্যু রোধ করে। -জামে তিরমিযী ৬৬৪; ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, হাদীসটি এই সনদে হাসান, গরীব।

  • যাকাত সম্পদের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করে: হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত. জনৈক ব্যক্তি নবীজির (সা.) নিকট জিজ্ঞাসা করল, যে নিজের মালের যাকাত আদায় করল তার ফায়দা কি? উত্তরে নবীজি সা. বললেন-

>مَنْ أَدَّى زَكَاةَ مَالِه فَقَدْ ذَهَبَ عَنْهُ شَرُّه<.

যে ব্যক্তি নিজের মালের যাকাত আদায় করল, তার থেকে তার সম্পদের যাবতীয় অনিষ্টতা দূর হয়ে গেল।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ৯৮৩০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ২২৫৮; হাদীসটি মাওকুফ হাসান।

 

সম্পদ মানুষের জীবনে সবসময় সুখ বয়ে আনে না। কখনো দুঃখ অনিষ্টতার কারণও হয়। সম্পদের কারণে আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্টসহ খুন-খারাবীর মত জঘন্য ঘটনাও সংঘটিত হয়। সম্পদ কেন্দ্রিক এধরণের সকল অনিষ্টতা থেকে যাকাত সুরক্ষা প্রদান করে।

যাকাত সম্পদ আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে

যাকাত বান্দার ক্বলবকে যেমন লোভ-লালসা, সম্পদ লিপ্সা, কৃপণতা এবং অন্তরের নিষ্ঠুরতাসহ আত্মিক রোগ-ব্যাধি হতে পরিচ্ছন্ন করে। তেমনি তার সম্পদকেও অকল্যাণ ও অমঙ্গল হতে পবিত্র করে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

{خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ بِهَا}

আপনি তাদের মাল থেকে সাদাকা (যাকাত) গ্রহণ করুন, যা দ্বারা আপনি তাদের পবিত্র করবেন এবং সংশোধন করবেন। -সূরা তাওবা (৯): ১০৩।

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

                                     > إِنَّ اللَّهَ لَمْ يَفْرِضِ الزَّكَاةَ إِلاَّ لِيُطَيِّبَ مَا بَقِىَ مِنْ أَمْوَالِكُمْ<.

রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, আল্লাহ তাআলা যাকাত ফরজ করেছেন শুধু এজন্য যে, তোমাদের অবশিষ্ট মাল যেন পবিত্র হয়ে যায়।-সুনানে আবু দাউদ, ১৬৬৪; মুনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ২৪৯৯, হাদীসটি এই সনদে দুর্বল।

রাসূলুল্লাহ সা. হযরত উম্মে সালামা রা. কে বললেন إِذَا أَدَّيْتَ زَكَاتَه فَلَيْسَ بِكَنْزٍ  তুমি যদি অলঙ্কারের যাকাত আদায় করে দাও তাহলে তা পুঞ্জিভূত সম্পদের অন্তর্ভুক্ত হবে না।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫৬৪; আল-মু‘জামুল কাবীর, হাদীস ৬১৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ১৪৩৮; হাদীসটি আমলযোগ্য।

হযরত ইবনে উমর রা. জনৈক ব্যক্তির প্রশ্নের জবাবে বললেন-

فَلَمَّا أُنْزِلَتْ جَعَلَهَا اللَّهُ طُهْرًا لِلأَمْوَالِ.  যখন যাকাতের বিধান অবতীর্ণ হল, তখন আল্লাহ তাআলা তাকে সম্পদের পবিত্রতার কারণ বানালেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪০৪

দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যাকাতের ভূমিকা

দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যাকাতের ভূমিকা, অবদান অপরিসীম। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা পেশ করা হলো।

  • ধনী-গরিবের বৈষম্যের অবসান: আল্লাহ তাআলা যৌক্তিক কারণেই ধনী-গরিবের ব্যবধান তৈরি করেছেন। সকলেই ধনী অথবা সকলেই গরিব হলে উৎপাদনের চাকা সচল থাকবে না। তবে সেই ব্যবধান যেন আকাশসম না হয় এবং সমাজের সিংহভাগ সম্পদ যেন মুষ্টিময় কিছু মানুষের হাতে কুক্ষিগত না হয়ে যায় – এজন্যে যাকাত আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-  كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنْكُمতোমাদের মধ্যকার বিত্তবানদের মধ্যেই যেন সম্পদ পুঞ্জিভূত না হয়। -সূরা হাশর (৫৯): ৭।

যাকাত আদায়ের মাধ্যমে ধনী গরিবের মাঝে বিরাজমান আকাশসম বৈষম্য ধীরে ধীরে দূর হয়ে অর্থনৈতিক সাম্যের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

  • দারিদ্র্য বিমোচন: দারিদ্র্য বিমোচনে যাকাতের অবদান বিস্ময়কর। ধনীদের সম্পদের আড়াই শতাংশ পরিকল্পিতভাবে গরিবদের প্রদান করলে, তারা নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়ে ধীরে ধীরে পেশা, যোগান ও উৎপাদনেও অংশীদার হতে পারবে। ফলে তাদের আর যাকাত গ্রহণের প্রয়োজন হবে না।
  • দরিদ্ররা স্বাবলম্বী হয়: পুঁজিবাদী সমাজের দরিদ্ররা দিন দিন দারিদ্র রোষানলে পড়তে থাকে, কোটিপতিরা দিন দিন সম্পদের পাহাড় গড়তে থাকে। কিন্তু যাকাত আদায়ের মাধ্যমে দরিদ্ররাও স্বাবলম্বী হয়ে একসময় যাকাত আদায়ের যোগ্য হয়ে উঠে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের যাকাত বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের যাকাতযোগ্য সম্পদের পরিমাণ দশ লক্ষ কোটি টাকা। (দৈনিক ইনকিলাব, ১১ মে ২০২৪ ইং) এর আড়াই শতাংশ হারে যাকাতের পরিমাণ হয় পঁচিশ হাজার কোটি টাকা। একাধারে পনেরো বছর সঠিকভাবে যাকাত আদায় করলে দেশে যাকাত নেওয়ার মতো কোনো মানুষই পাওয়া যাবে না।
  • সামাজিক অপরাধ নির্মূল: অর্থের অভাবে মানুষ অন্যায়, অবিচার, চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। সমাজের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে আর্থিক অবস্থার উন্নতি হলে অসামাজিক কার্যক্রম থেকে মানুষ দূরে থাকবে।
  • সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি: যাকাত মানুষের মধ্যে উঁচু-নিচু ভেদাভেদ দূর করে সাম্যের পরিবেশ তৈরি করে। ধনীদের দিলে গরিবদের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি করে। এটা পারস্পরিক ঘৃণা, বিদ্বেষ দূর করে ভ্রাতৃত্ববোধের বিকাশ ঘটায়।

এছাড়াও যাকাত মজুতদারী দূর করে অর্থনৈতিক ভারসাম্যতা, স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদান করে। ঋণমুক্তি, বেকারত্ব দূরীকরণসহ সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে তা বিস্ময়কর ভূমিকা পালন করে।

যাকাত গরীবের প্রতি করুণা নয় অধিকার

বৈচিত্রময় এই পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা কাউকে বিপুল সম্পদের মালিক বানিয়েছেন। আবার কাউকে করেছেন নিঃস্ব। সম্পদশালী মানুষের উপর কর্তব্য হলো, পুরোটা নিজে ভোগ না করে এর কিয়দংশ নিঃস্ব ও অসহায়দের মাঝে খরচ করা। কারণ সে তার সম্পদের প্রকৃত মালিক নয়। সম্পদের প্রকৃত মালিকানা তো একমাত্র আল্লাহ তাআলার। যেমন ইরশাদ হয়েছে- وَآتُوهُمْ مِنْ مَالِ اللَّهِ الَّذِي آتَاكُمْ  তোমরা তাদের দান করো আল্লাহ তাআলার মাল থেকে যা তিনি তোমাদের দান করেছেন। -সূরা নূর (২৪) : ৩৩।

সাদাকা-যাকাত গরিবের প্রতি অনুগ্রহ, করুণা বা অনুকম্পা নয়। বরং তা গরিব অসহায়দের অধিকার। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ তাদের ধন-সম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক্ব (অধিকার) রয়েছে। -সূরা যারিয়াত (৫১): ১৯।

এই আয়াতে হক্ব (অধিকার) শব্দের ব্যবহারের দ্বারা স্পষ্টভাবে এই প্রতীয়মান হয় যে, ধনী ব্যক্তি গরিবদেরকে যে সাদাকা-যাকাত, ফিতরা দান করে, সেটা তাদের প্রতি তার কোন দয়া নয়; তাদের অধিকার। যা আদায় করা ধনীর কর্তব্য। এক্ষেত্রে গরিবরাই বরং যাকাত গ্রহণ করে ধনীদের কর্তব্য পালনের সুযোগ করে দিয়ে তাদের উপর অনুগ্রহ করছে।

যাকাত আদায় না করার ভয়াবহতা

কুরআন ও হাদীসে যাকাত আদায় না করার ভয়াবহ শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি শাস্তির কথা উল্লেখ করা হলো-

  • পুঞ্জিভূত সম্পদ উত্তপ্ত করে শরীরে সেঁক: কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে-

{وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ، يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ}.

আর যারা স্বর্ণ-রৌপ্য সঞ্চয় করে রাখে, আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দান করুন। সেদিন জাহান্নামের আগুনে সেগুলোকে উত্তপ্ত  করা হবে। অতঃপর তা দ্বারা দাগ দেয়া হবে তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্টদেশে,  আর বলা হবে এ তো ঐ সম্পদ যা তোমরা জমা করেছো নিজেদের জন্য। সুতরাং যা জমা করতে তার স্বাধ আস্বাদন করো।-সূরা তাওবা (৯): ৩৪, ৩৫।

  • বিষধর সাপের দংশন: রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন-

>مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالاً فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ ، يَعْنِي شِدْقَيْهِ ، ثُمَّ يَقُولُ أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ<.

আল্লাহ তাআলা যাকে সম্পদ দান করেছেন, অথচ সে যাকাত আদায় করেনি, কেয়ামতের দিন তার সম্পদ ভয়ংকর সাপের আকৃতি ধারণ করবে এবং চোয়াল পেঁচিয়ে ধরবে, আর দংশন করে করে বলবে, আমি তোমার সম্পদ! আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ! -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩১২।

  • দুর্ভিক্ষের কারণ: যাকাত আদায় না করলে পার্থিব জীবনেও অনেক বিপদ-মুসিবত, আযাব-গযবের সম্মুখীন হতে হয়। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

>مَا مَنَعَ قَوْمٌ الزَّكَاةَ إَلَّا ابْتَلَاهُمُ اللهُ بِالسِّنِيْنَ<.

যে সম্প্রদায় যাকাত দেয়া থেকে বিরত থেকেছে, আল্লাহ তাদেরকে দুর্ভিক্ষে নিমজ্জিত করেছেন। -আল-মুজামুল আওসাত, তাবারানি, ৪৫৭৭।

উক্ত হাদীসের সনদ সম্পর্কে হাফেজ নূরুদ্দীন হাইছামী রহ. (মৃ. ৮০৭ হি.) বলেন, এর বর্ণনাকারী সকলেই নির্ভরযোগ্য। -মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ ৭/২৬, দারুল মিনহাজ, সৌদি আরব।

  • বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ: রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন-

>وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ ، إِلاَّ مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ<

যাকাত আদায় না করলে আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। -সুনানে ইবনে মাজাহ,  ৪০১৯। শায়খ শুয়াইব আল আরনাঊত রহ. ( ২০১৬ খ্রি.) বলেন, হাদীসটি হাসান লিগাইরিহী।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সঠিকভাবে যাকাত আদায় করে ইহকাল ও পরকালের শাস্তি থেকে নাজাত পাওয়ার তাওফিক দান করেন! আমীন!!

 

লেখক, আব্দুল্লাহ মুহা. নোমান

লেখক, গবেষক ও শিক্ষক     

উস্তাদ, জামিয়া ইসলামিয়া উত্তর কাফরুল মাদরাসা, ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা, বাংলাদেশ।

#Leave A Comment

#Leave A Comment