২৯শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সোমবার , দুপুর ২:৩৯

আখলাক – পর্ব- ১

আখলাক – পর্ব- ১

বিনয় : মর্যাদা লাভের এক ঐশী প্রেসক্রিপশন

বিনয় মুমিনের পরম আকাঙ্খিত একটি গুণ। বরং এ গুণে গুণান্বিত হওয়া মুমিনের জন্য অপরিহার্য। বিনয় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়। জান্নাতে যাওয়ার উসীলা। দুনিয়া-আখেরাত উভয় জগৎ সুন্দর হয় এর মাধ্যমে। এর দ্বারা মানুষ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। প্রিয়ভাজন হয় মানুষের কাছেও। আল্লাহ তাআলা বিনয়ীকে ভালবাসেন। বিনয়ের মাধ্যমে মানুষ অনেক বিপদ থেকে মুক্তি লাভ করে। বিচারের কঠিনতম দিনেও বিনয় মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে।

তাই প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য, বিনয়ের মর্ম জেনে নিজেকে বিনয়ী করে গড়ে তোলার চেষ্টা করা।

বিনয়ের অর্থ-মর্ম

বিনয়ের আরবি শব্দ হল তাওয়াযু। তাওয়াযুর শাব্দিক অর্থ নিজেকে ছোট, হীন, নিচু করে প্রকাশ করা। বাস্তবে একজন ব্যক্তি অনেক মর্যাদাসম্পন্ন হতে পারেন। কিন্তু তিনি যখন অন্যের সামনে নিজেকে ছোট করে উপস্থাপন করবেন, কথায়-কাজে নিজের বড়ত্ব প্রকাশ না করে একজন নগন্য ব্যক্তির মত আচরণ করবেন তখন তার এই আচরণকে বলা হবে বিনয়।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে মুমিনের সিফাত (গুণ) বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন,

﴿أَذِلَّةٍ عَلَى ٱلمُؤمِنِنَ أَعِزَّةٍ عَلَى ٱلكَـافِرِينَ}

তারা মুমিনগণের সামনে নগণ্য (হয়ে থাকে) আর কাফেরদের সামনে মর্যাদাবান।-সূরা মায়িদা (৫) : ৫৪

শরীয়তের পরিভাষায় তাওয়াযু অর্থ, সত্যের সামনে আত্মসমর্পণ করা এবং শরীয়তের নির্দেশনাসমূহ কোন ধরণের যুক্তি তর্ক ব্যতিরেকে মেনে নেওয়া।-ফাতহুল বারী ১১/৩৪১

তাওয়াযুর স্তর

তাওয়াযুর তিনটি স্তর আছে।

১. দীনের জন্য তাওয়াযু অবলম্বন করা। অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে দীন হিসেবে যা কিছু নিয়ে এসেছেন সেগুলোর নিঃশর্ত আনুগত্য ও অনুসরণ করা।

এর প্রকাশটা তিনভাবে হবে।

এক. শরীয়তের কোন বিধানের বিপরীতে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন না করা। কোন বিধান বুঝে না আসলে সেটাকে নিজের বোঝার দুর্বলতা মনে করা।

দুই. শরীয়তের কোন দলীলকে ভুল বা ত্রুটিযুক্ত মনে না করা।

তিন. শরীয়তের কোন বিধানের বিরুদ্ধাচরণ না করা। কথা-বার্তায়, কাজে-কর্মে, আচার-আচরণে কোনভাবেই না। মনে মনেও না।

২. নিজের জন্য যা পছন্দ, তা অন্যের জন্যও পছন্দ করা। শত্রুকেও তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না করা। কেউ অন্যায় করার পর ওযর পেশ করলে তার ওযর গ্রহণ করে নেওয়া। তার সঙ্গে রাগারাগি বা অন্যায় কোন আচরণ না করা।

৩. হক্বের সামনে নিজেকে পূর্ণ সমর্পণ করা। মর্যাদাপ্রাপ্তির আকাঙ্খা ত্যাগ করা। কোন নেক কাজ করার কারণে নিজেকে বিনিময়ের হক্বদার মনে না করা।-মাদারিজুস সালেকীন, ইবনুল কায়্যিম রহি. (৬৫৯-৭৫১ হি.) দারু আতাআতীল ইমল।

অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশ পালনের জন্যই ইবাদত করা। কেবল অভ্যাসবশত বা নিজের পছন্দের অনুকূলে হওয়ার কারণে কোন নেক কাজ না করা।

বিনয় ও নিচুতার মধ্যে পার্থক্য

বিনয় হল, আল্লাহর জন্য নিজেকে ছোট মনে করা। নিজেকে কারো চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিংবা অন্যের সম্মান লাভের উপযুক্ত মনে না করা। এই গুণ আল্লাহ তাআলা এমন ব্যক্তিকেই দান করেন যাকে তিনি ভালোবাসেন, নৈকট্য দান করতে চান।

আর নিচুতা হল নিজের বাসনা চরিতার্থ করার জন্য নিজেকে অপদস্থ করা। যেমন পদবৃদ্ধির আশায় কারো সামনে নিজেকে তুচ্ছ করে উপস্থাপন করা। কারো মন জয়ের আশায় তার শত অপমানকেও হাসিমুখে সহ্য করা। এ ধরণের কাজ নিচুতা। বিনয় নয়। এমন নিচুতাকে আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না।

বিনয় সম্পর্কিত কিছু আয়াত ও হাদীস

কুরআনে কারীমের অনেক আয়াত ও অগণিত হাদীস থেকে বিনয়-নম্রতা অর্জনের গুরুত্ব বোঝা যায়। নিম্নে এমন কিছু আয়াত ও হাদীস উল্লেখ করছি।

১. আল্লাহর রাসূল সা. ছিলেন বিনয়ের আধার। কাফের-মুশরিকরা বিদ্বেষপূর্ণ হৃদয় নিয়ে তার সামনে উপস্থিত হত। কিন্তু তার বিনয় দেখে বিগলিত হয়ে যেত। সমস্ত দ্বেষ বিদূরিত হয়ে যেত তাদের অন্তর থেকে। কালিমা পড়ে নাম লিখিয়ে নিত বিশ্বাসীদের কাতারে।

আল্লাহ তাআলা এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে কুরআনে কারীমে বলেন,

﴿فَبِمَا رَحمَة مِّنَ ٱللَّهِ لِنتَ لَهُم وَلَو كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ ٱلقَلبِ لَٱنفَضُّوا مِن حَولِكَ﴾

অর্থ: আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি নম্র ছিলে। যদি তুমি কঠোর-রূঢ় হৃদয়ের অধিকারী হতে তাহলে লোকেরা তোমার পাশ থেকে সরে যেত।-সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৫৯

২. একজন মুমিনের চাল-চলন, আচার আচরণ কেমন হবে তা কুরআনে কারীমের বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেন,

﴿وَعِبَادُ ٱلرَّحْمنِ ٱلَّذِيْنَ مشُوْنَ عَلَى ٱلأَرضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ ٱلجَـاهِلُونَ قَالُوْا سَلَـامًا﴾

অর্থ: আর রহমানের বান্দা তারা যারা দুনিয়াতে নম্রভাবে চলাফেরা করে। আর অজ্ঞলোকেরা তাদেরকে সম্বোধন করলে তারা বলে ‘সালাম।-সূরা ফুরকান (২৫) : ৬৩

৩. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন,

>مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ وَمَا زَادَ اللهُ عَبْدًا بِعَفْوٍ إِلَّا عِزًّا، وَمَا تَوَاضَعَ أَحَدٌ لِلهِ إِلَّا رَفَعَهُ اللهُ<.

অর্থ: দান-সদকা সম্পদকে হ্রাস করে না। ক্ষমার দ্বারা আল্লাহ তাআলা বান্দার সম্মানকেই কেবল বৃদ্ধি করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিনয় অবলম্বন করে আল্লাহ তাআলা তাকে উঁচু করে দেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৮৮

৪. হযরত মুআয ইবনে আনাস যুহানী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন,

>مَنْ تَرَكَ اللِّبَاسَ تَوَاضُعًا لِلهِ وَهُوَ يَقْدِرُ عَلَيْهِ دَعَاهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رُؤُوسِ الْخَلَائِقِ، حَتَّى يُخَيِّرَهُ مِنْ أَيِّ حُلَلِ الْإِيمَانِ شَاءَ يَلْبَسُهَا<.

অর্থ: যে ব্যক্তি সামর্থ থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর জন্য বিনয়াবনত হয়ে (চাকচিক্যপূর্ণ) পোশাক ত্যাগ করে, আল্লাহ তাআলা তাকে কেয়ামতের দিন সমস্ত সৃষ্টিজীবের সামনে ডেকে সুযোগ দিবেন যে, সে ইমানের যে পোশাক চাইবে সে পোশাকই পরিধান করবে।-জামে তিরমিজী, হাদীস ২৪৮১, ইমামি তিরমিজী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিনয়

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বশেষ নবী। তার সময় থেকে কেয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মানুষ ও জ্বিনের নবী তিনি। এত বড় মর্যাদার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি অত্যন্ত সাদাসিধা জীবন যাপন করতেন। তার চলাফেরা, পোশাক-আশাক, কথা-বার্তা, ঘরবাড়ি ইত্যাদি কোন কিছু দেখে অন্যদের থেকে তাকে আলাদা করা সম্ভব ছিল না।

হযরত ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

>إِنَّمَا أَنَا عَبد آكُلُ كَمَا يَأْكُلُ الْعَبْدُ وَأَجْلِسُ كَمَا يَجْلِسُ الْعَبْدُ<.

আমি তো একজন গোলাম। আমি সেভাবেই খাই যেভাবে গোলামরা খায়। সেভাবেই বসি যেভাবে গোলামরা বসে।-মুসনাদে আবু ইয়া‘লা, হাদীস ৪৯২০; আখলাকুন্নাবী, আবুশ শায়খ আসবাহানী, হাদীস ৬১৪; হাদীসটি হাসান।

সে যুগের সম্মানের বাহন ছিল উট, ঘোড়া ইত্যাদি। কিন্তু রাসূল সা. স্বাভাবিকভাবে গাধা-খচ্চর ইত্যাদি জন্তুতে চড়ে সফর করতেন। এসব জন্তুর উপর দামী কোন গদি থাকত না। কখনো উসামা ইবনে যায়েদ রা., আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. প্রমুখের মত ছোট সাহাবীদের পিছনে বসিয়ে নিতেন।

মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে রাসূল সা. সর্বপ্রথম বনু আমর ইবনে আওফ গোত্রে যাত্রাবিরতি করেন। তখন আবু বকর রা. সঙ্গে ছিলেন। তিনি দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করলেন। রাসূল সা. তখন চুপ করে বসে ছিলেন। ফলে যে সকল আনসারী সাহাবী রাসূল সা.কে চিনতেন না তাদের অনেকে আবু বকর রা.কে রাসূল মনে করে অভিবাদন জানাতে শুরু করল। একপর্যায়ে রাসূল সা. এর শরীরে রোদ লাগলে আবু বকর রা. নিজের চাদর দিয়ে তাকে ছায়া দিতে শুরু করেন। তখন সবাই আল্লাহর রাসূল সা.কে চিনতে পারেন।-সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৯০৬

যখন সম্মিলিতভাবে কোন কষ্টের কাজ করার প্রয়োজন দেখা দিত তখন রাসূল সা. নিজেও তাদের সঙ্গে কাজে শরীক হয়ে যেতেন। নিজেকে নেতা মনে করে কেবল নির্দেশ দিয়ে ক্ষ্যান্ত হতেন না। খন্দকের যুদ্ধের আগে পরীখা খননের সময় ক্ষুধার কষ্ট নিবারণ করার জন্য অন্য অনেকের মত তিনিও পেটে পাথর বেঁধে নিয়েছিলেন।-সহীহ বুখারী, হাদীস ৪১০১

সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সা. এর খেদমতের জন্য পাগল ছিলেন। একটু ইশারা করলেই রাসূল সা. এর জন্য যে কোন কাজ করতে তারা প্রস্তুত হয়ে যেতেন। কিন্তু নিজের কাজ নিজে করা রাসূল সা. এর অভ্যাস ছিল। ব্যক্তিগত কাজের জন্য কখনো কাউকে নির্দেশ দিতেন না। খাদেমদেরকেও না। ঘরে গিয়েও রাসূল সা. স্ত্রীদের সহযোগিতা করতেন। একবার এক ব্যক্তি হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা.কে জিজ্ঞেস করলেন, রাসূল সা. কি ঘরে গিয়ে কাজ করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূল সা. তার জুতা ঠিক করতেন, কাপড় সেলাই করতেন, অন্য মানুষের মত ঘরের সব কাজই করতেন।-মুসনাদু আবি ইয়ালা, হাদীস ৪৮৪৮

সাহাবায়ে কেরামের বিনয়

হযরত আবু বকর রা. খলীফা হওয়ার পূর্বে মহল্লার লোকদেরকে মেষের দুধ দোহন করে খাওয়াতেন। তিনি খলীফা হলে এক বালিকা বলল, এখন আর তিনি আমাদের মেষ থেকে দুধ দোহন করে দিবেন না। এটা শুনে তিনি বললেন, আমি অবশ্যই দোহন করে দিব। আমি চাই, যে দায়িত্বে আমি প্রবেশ করেছি তা যেন আমার কোন আচরণ পরিবর্তন না করে। (ত্ববাকাতে ইবনে সাদ: ৩/১৭০ )

একবার উমর রা. রাতে বেলা মদীনার এক অন্ধ মহিলার কাছে গিয়ে তার কাজ কর্ম করে দেওয়ার ইচ্ছা করলেন। কিন্তু তিনি গিয়ে দেখলেন, তার আগেই অন্য কেউ তার সব কাজ করে দিয়েছে। উমর রা. তখন অনুসন্ধান করে জানতে পারলেন, আবু বকর রা.ই সেই ব্যক্তি যিনি তার কাছে এসে চুপিসারে তার সব কাজ করে দিয়ে যান। অথচ আবু বকর রা. তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত খলীফা! (আল কামিল ফিত তারিখ, ইবনুল আছীর (৬৩০ হি.) ২/২৬৫)

হযরত উরওয়া ইবনে যুবাইর রা. বলেন, আমি উমর রা.র কাঁধে একবার পানির একটি মশক দেখে বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনার জন্য এটা শোভনীয় না। তিনি বললেন, আমার কাছে যখন বিভিন্ন দেশ- গোত্রের প্রতিনিধি দল অনুগত অবস্থায় আসে তখন আমার মধ্যে অহংবোধ তৈরী হয়। তাই আমি এটা দূর করতে চাচ্ছি। এটা বলে তিনি পানির মশকটা নিয়ে এক আনসারী মহিলার ঘওে গেলেন এবং তার পাত্রে পানি ঢেলে দিয়ে আসলেন।-হিলয়াতুল আওলিয়া, আবু নুআইম ৩: ২৭৫

বিনয় অর্জনে করণীয়

বিনয়ের বিপরীত জিনিস হল অহংকার। তাই বিনয় অর্জনের জন্য সর্বপ্রথম কাজ হল অহংকার প্রকাশ পায় এমন কথা, কাজ ত্যাগ করা। এর জন্য আমরা নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে পারি।

১. ছোট-বড়, ধনী-গরীব সবাইকে আগে আগে সালাম দিব।

২. সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলব।

৩. ভুল হলে নিঃসংকোচে স্বীকার করব। সেটা অধঃস্তনের সঙ্গে হলেও।

৪. ধনী-গরীব সবার সঙ্গে উঠাবসা করব। গরীব মানুষের দাওয়াত নির্দি¦ধায় গ্রহণ করব।

৫. অন্যের মতামত মনোযোগ দিয়ে শুনবো এবং প্রত্যেকের মতের মূল্যায়ন করব।

৬. কোন বিষয়ে জানা না থাকলে ‘জানি না’ বলতে সংকোচ করব না।

৭. কারো উপকার করার পর তা কখনো কারো সামনে প্রকাশ করবো না।

৮. বয়সে, পদমর্যাদায় কিংবা অর্থের বিবেচনায় ছোট ব্যক্তিও যদি কোন ন্যায়সঙ্গত কথা বলে তাহলে তা গ্রহণ করে নিব। ছোট বলে কাউকে তাচ্ছিল্য করব না।

৯. নিজের অর্থ-সম্পদ, মেধা, সৌন্দর্য, সুস্থতা, পরহেযগারী, ইত্যাদি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত এই বিশ্বাস রেখে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করব। এসবের কারণে নিজেকে কারো উপর শ্রেষ্ঠ মনে করব না।

১০. নিজেকে অন্যের সম্মান লাভের উপযুক্ত ভাববো না। কোন মজলিসে, অনুষ্ঠানে বা সংগঠনে নিজের জন্য আলাদা অবস্থানের আশা করব না।

১১. অপ্রয়োজনে উঁচু আওয়াজে, ধমকের সুরে কথা বলব না।

১২. বড়দেরকে সম্মান করব। ছোটদেরকে স্নেহ করব।

১৩. নিজের কাজ নিজ হাতে করব।

১৪. কাউকে কোন সহযোগিতা করতে চাইলে নিজে সশরীরে গিয়ে করব।

১৫. ওযর না থাকলে নিচে বসে খাবো।

ইত্যাদি।

এখানে উদাহরণস্বরূপ কিছু বিষয় উল্লেখ করা হল। এসব বিষয়ের উপর চিন্তাভাবনা করলে এমন আরো অনেক বিষয় পাওয়া যাবে যা বিনয় অর্জনের জন্য জরুরি।

সর্বোপরী এ কথাটা খুব ভালোভাবে মনে রাখব যে, বিনয়ের দ্বারা কেউ ছোট হয় না। বরং আল্লাহ তাআলা বিনয়ীর মর্যাদা কেবল বৃদ্ধিই করেন। বিনয়ী নিজের চোখে ছোট হয়। কিন্তু আল্লাহ তাআলা ও মানুষের চোখে হয় মর্যাদাবান। আর অহংকারী নিজেকে বড় মনে করে। কিন্তু সবার চোখে সে হয় নীচ, হীন, নিকৃষ্ট।

এজন্যই বুযুর্গানে দীন এই দুআটা বেশি বেশি করতেন,

اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي فِي عَيْنِي صَغِيرًا، وَفِي أَعْيُنِ النَّاسِ كَبِيرًا

হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার চোখে ছোট বানিয়ে দিন। আর মানুষের চোখে বড় বানিয়ে দিন।-দ্র. মুসনাদুল বাযযার, হাদীস ৪৪৩৯; ইলালু ইবনে আবী হাতেম, মাসআলা ১৯৭৮

 

লেখক, মাওলানা সুহাইল ইসলাম

 আলেম, শিক্ষক: দারুল ফিকরি ওয়াল ইরশাদ, ২৪ ফুট, কদমতলী, ঢাকা।

#Leave A Comment

#Leave A Comment